সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন
মো. সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া(বরিশাল) থেকে॥ বানারীপাড়ায় সরকারী মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের (পাইলট) শিক্ষার্থীদের বই আটকে রেখে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ১২শ’ ৫০ টাকা করে ভর্তি ‘ফি’ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।ওই স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন। তারা জানান, ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও সরকারী নিয়ম বহির্ভূত ভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সরকারী বিনামূল্যের বই আটকে রেখে ১২শ ৫০ টাকা করে ভর্তি ‘ফি’ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের প্রাপ্তি রশিদও দেওয়া হচ্ছেনা।
ফলে শিক্ষার্থীদের ওই ভর্তি ‘ফির’ টাকা কোন খাতে নেয়া হচ্ছে সে বিষয়টিও অজানা থেকে যাচ্ছে। এবিষয়ে বানারীপাড়া সরকারী মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হৃদয় ইসলামের পিতা দিনমজুর আব্দুল জলিল জানান, তিনি ১ জানুয়ারী সকাল ১০টায় তার ছেলে হৃদয় ইসলামকে নিয়ে ওই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করতে যান। এ সময় ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ তার কাছে ছেলের ভর্তির জন্য ১২শ’৫০ টাকা জমা দিতে বলেন।
এসময় তিনি ৫’শ টাকা দিয়ে তার ছেলেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করার পাশাপাশি পাঠ্যবই দেয়ার দাবী জানালে তাকে পরবর্তীতে পুরো টাকা নিয়ে অফিস কক্ষে এসে ছেলে ভর্তি করে বই নিতে বলেন। পরে সে ওই ৫’শ টাকা নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করার জন্য স্কুলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লার কাছে গেলে তিনি তার কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শুনে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ কান্ত হাওলাদারকে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠ্যবই দিতে বলেন।
এর পরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা না পাওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়নি। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ কান্ত হাওলাদার। প্রধান শিক্ষকের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দিনমজুর আব্দুল জলিল জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লার সাথে প্রধান শিক্ষকের কথা হওয়ার পরেও পুরো টাকা না দেয়া পর্যন্ত তার ছেলেকে ওই স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি। তিনি ওই ঘটনার তিন দিন পর অন্যের কাছ থেকে কোন রকম ৭শ’৫০ টাকা ধার করে মোট ১২শ’৫০ টাকা দিয়ে তার ছেলে হৃদয় ইসলামকে ওই স্কুলে ভর্তি করে পাঠ্যবই নিয়ে এসেছেন। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ১২শ’৫০ টাকার মানি রিসিভ (রশিদ) চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ওই টাকার কো মানি রিসিভ দেননী। একই ভাবে ওই স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিম’র পিতা ভ্যানচালক সুমন হাওলাদার জানান, নতুন বছরে স্কুলে ক্লাস শুরুতেই তার মেয়ে মিমকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করার জন্য বানারীপাড়া সরকারী মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে নিয়ে যান।
এসময় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার কাছে মেয়ের ভর্তির জন্য ১২শ’৫০ টাকা দাবী করেন। ওই টাকা দিতে না পারার কারণে ওই দিন তার মেয়েকে সেখানে ভর্তি করতে পারেননি এবং পাঠ্যবইও পাননি। দু’দিন পরে তিনি অন্যের কাছ থেকে ধার-কর্য করে ১২শ’৫০ টাকা সংগ্রহ করে তার মেয়েকে ওই স্কুলের নবম শ্রেণীতে ভর্তি করে পাঠ্য বই নিয়ে আসেন। একই অভিযোগ করে বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. সুজন মোল্লা জানান ৮ জানুয়ারী তার ভাগ্নির ছেলে আব্দুল্লাহকে ওই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করতে গেলে তার কাছ থেকে ১২শত টাকা নেওয়া হলেও কোন প্রাপ্তি রশিদ দেওয়া হয়নি। এদিকে সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ভর্তি ‘ফি’ সহ অন্যান্য খরচের মোট ১২শ’৫০ টাকা ছাড়া ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের শ্রেণী উন্নয়ন করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী ১ জানুয়ারী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ করার কথা থাকলেও ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি’র নামে বই আটকে রাখায় শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি স্কুল ও সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয়েছে।এবিষয়ে কোন কিছুই জানা নেই বলে দাবী করে বানারীপাড়া সরকারী মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের (পাইলট) সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ জানান স্কুলের কোন শিক্ষক যদি সরকারী নিয়ম বহির্ভূত কাজ করে থাকেন, তাহলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
Leave a Reply